নদিয়া : কথায় বলে কোন কিছুই ফেলে দিতে নেই,, ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়েই গড়ে উঠতে পারে অনেক কিছু। এবার হাজার হাজার কালি ফুরানো পেন ও পেন্সিল দিয়ে সুদর্শন দুর্গা প্রতিমা তৈরি করলেন নদীয়ার এক গৃহবধূ। প্রায় ৯ মাসের প্রচেষ্টায় এখন পুরোপুরি সম্পন্ন দুর্গা প্রতিমা। হ্যাঁ এমনই এক দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত কৃষ্ণগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সত্য নগর পাড়ার গৃহবধূ পাপিয়া কর।
তিনি একজন পেশায় হস্তশিল্পী, যদিও সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে তার অনেক, সমাজের পিছিয়ে পড়া পরিবারের শিশুদের দেখাশোনা করেন তিনি, এবং নির্দিষ্ট সময় বের করে শিক্ষা প্রদান করে। এই নিয়েই বর্তমানে দিন কাটে পাপিয়ার। প্রায় এক বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল নদীয়ার যুবক স্বপ্নদ্বীপের,, তারপরে তরতাজা প্রাণ চলে যাওয়ার কারণে তার মনে উঠে এসেছিল প্রতিবাদের ভাবনা। তিনি মনে মনে ভেবেছিলেন এমন কিছু করে দেখাবেন যেখানে দুর্গামূর্তির মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদ তুলে ধরতে পারেন।
এরপর থেকেই সংগ্রহ করতে থাকেন কালি ফুরিয়ে যাওয়া পেন ও পেন্সিল,, তারপর থেকেই শুরু করেন দুর্গা প্রতিমা তৈরীর কাজ। প্রায় ৩০০০০ হাজার পেন ও পেন্সিল দিয়ে তৈরি করে ফেলেন দুর্গা প্রতিমা, সাথে রয়েছে মা দুর্গার চার সন্তান। কার্তিক গানেশ, সরস্বতী ও লক্ষ্মী, প্রত্যেকটি মূর্তি পেন ও পেন্সিল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। নাম দিয়েছেন অশুভ শক্তি বিনাশ হোক শুভ শক্তির আগমন হোক,, অর্থাৎ কলমকারী দুর্গা।
এ প্রসঙ্গে গৃহবধূ পাপিয়ার কথায়,, স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যুতে তিনি খুবই ভেঙে পড়েছিলেন, ভেবেছিলেন হয়তো সবাই ঝাপিয়ে প্রতিবাদে নামবে, তারপরও ঘটে গেল আর জি করের ডাক্তার পরুয়ার সাথে নিশংস ঘটনা। তাই শিক্ষিত অসুর দের বিনাশ করতে তিনি প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে দুর্গা প্রতিমার নাম দিয়েছেন কলমকারী দুর্গা। যদিও তার তৈরি দুর্গা প্রতিমা পাড়ি দেবে নদীয়ার রানাঘাট পাইকপাড়া ব্রতী সংঘের পুজো মন্ডপে, যদিও ওই মন্ডপের থিম তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে,, এখন শুধু পুজো আসার অপেক্ষা।
একটা সময় তার কাজের প্রতিভার মধ্যে দিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন দিদি নম্বর ওয়ান এবং দাদাগিরির মঞ্চ জি বাংলার রান্নাঘরের মত খ্যাত জায়গায়। তার পরিচিতি এখন গোটা বাংলা জুড়ে, কারণ তিনি শুধু হস্তশিল্পী নন প্রতিদিনই অনেক দুস্থ পরিবারের ৩০ থেকে ৪০টি বাচ্চার দেখাশোনা করেন। হাতে কলমে শেখানো হয় পড়াশুনো, পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে জান তিনি।