পূর্ব মেদিনীপুর: করোনা থেকে কাজ হারিয়েছে। তারপর থেকে কাজ পেলেও ১৫-২০ হাজার টাকার কাজে খরচ সামলাতে পারছে না উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা উত্তম মাইতি।সংসার রয়েছে, আরও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায় সে। অনেককে বলেছে। কেউ ধার দিয়ে সহযোগিতার কথা বলেনি। ব্যাংক থেকে ঋণ ও জোটেনি। শেষমেষ এটিএম থেকে টাকা লুট করার চিন্তাভাবনা মাথায় আসে। যা ভাবনা তাই কাজ।
মেছাদার একটি গ্যাসের দোকান থেকে গ্যাস সিলিন্ডার সহ এটিএম কাটার বার্ণার সংগ্রহ করে এই ৩৫ বয়সী ইঞ্জিনিয়ার। সরঞ্জাম বাসে চাপিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘার কাছে রামনগর থানা এলাকার রামনগর বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছায়। রাত্রি নটার দিকে পৌঁছে একটি গুমটি দোকানের আড়ালে প্রায় অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এরপর গ্যাস সিলিন্ডার সহ গ্যাস কাটার নিয়ে কাছেই রাস্তার অপরদিকে থাকা একটি সরকারি ব্যাংকের এটিএম এ ঢুকে পড়ে। রাত্রি ১২ টার দিকে রাস্তাঘাট বাস স্ট্যান্ড শুনশান হয়ে গেলে ঢুকে পড়ে যুবক। এটিএম এর শাটার নামিয়ে দেয়।
তার আগে শাটারের বাইরে শাটার নামিয়ে লিখে দেয় এটিএম বিকল রয়েছে। এরপর চলে তিন ঘন্টা ধরে অপারেশন। এটিএম এর সাইডে গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে ভেতর থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। নিজে যেহেতু ইঞ্জিনিয়ার টাকা কিভাবে কোথায় থাকতে পারে সেটা তার অজানা ছিল না। প্রায় ভোররাতে রাস্তায় যখন যান চলাচল মানুষজনদের চলাচলের শব্দ পায়, গ্যাস কাটার সরঞ্জাম এটিএম এর মধ্যে ফেলে কেবল টাকার ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয় ইঞ্জিনিয়ার যুবক। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেই হইচই পড়ে যায় এলাকায়।
রামনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ সরঞ্জাম সিজ করে ঘটনাস্থলে এসে। পাশাপাশি তদন্ত শুরু করে দেয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশি অভিযান চালায়। গত আট মে এটিএম কেটে টাকা লুট করেছিল। প্রায় তিন মাসের পর রবিবার হাবড়ার বাড়ি থেকে ধরা পড়ে যুবক। এর আগে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক শহরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম ও লুট করার চেষ্টা চালিয়েছিল। যুবককে গ্রেফতারের পর কাঁথি আদালতে পেশ করে পুলিশ।
আদালতে নির্দেশে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানতে পারে তার পরিস্থিতির কথা। সবকিছু সত্যি জানিয়েছে যুবক এমনটাই পুলিশ মনে করছে। একদিন দীঘায় বেড়াতে এসে রামনগর বাসস্ট্যান্ডে তার নজরে পড়েছিল একটি এটিএম, খুব নির্জনে রয়েছে এটিএম,সেই থেকে টার্গেট করেছিল।
তবে সঙ্গে আর কেউ ছিল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে একাই করেছে সে পুলিশ মনে করছে। আজ ছিল পুলিশের “পুনর নির্মাণ” তদন্ত। অভিনয় করে ঘটনাস্থলে কিভাবে সে এসেছিল এবং টাকা লুট করেছিল সবটাই দেখালো যুবক। পুলিশ সূত্রে খবর জেলায় আরো কয়েকটি এটিএম লুট হয়েছে, সবটাই তদন্ত চলছে।